কম্পিউটার (Computer): যা বর্তমান সময়ে বহুল ব্যবহৃত ও দৈনন্দিন জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ন একটি যন্ত্র। বর্তমান যুগ ইনফরমেশন ও টেকনোলোজি নির্ভর হওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে।
কম্পিউটার (Computer) শব্দটি গ্রিক “কম্পিউট” (Compute) শব্দ থেকে এসেছে। Compute শব্দের অর্থ হিসাব বা গণনা করা। আর কম্পিউটার (computer) শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। কিন্তু এখন আর কম্পিউটারকে শুধু গণনাকারী যন্ত্র বলা যায় না। কম্পিউটার এমন একটি যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করে। সভ্যতার বিকাশ এবং বর্তমানে তার দ্রুত অগ্রগতির মূলে রয়েছে গণিত ও কম্পিউটারের প্রবল প্রভাব।
কম্পিউটারের ইতিহাস: যুগে যুগে গণনার কাজে বিভিন্ন কৌশল ও যন্ত্র ব্যবহার করে থাকলেও অ্যাবাকাস (Abacus) নামক একটি প্রাচীন গণনা যন্ত্রকেই কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রথম যন্ত্র হিসেবে ধরা হয়। এটি আবিষ্কৃত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ সালে ব্যাবিলনে। ১৬৪২ সালে ১৯ বছর বয়স্ক ফরাসি বিজ্ঞানী ব্লেইজ প্যাসকেল সর্বপ্রথম যান্ত্ৰিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কার করেন। তিনি দাঁতযুক্ত চাকা বা গিয়ারের সাহায্যে যোগ বিয়োগ করার পদ্ধতি চালু করেন। উনিশ শতকের শুরুর দিকে আধুনিক একটি যন্ত্রের নির্মাণ ও ব্যবহারের ধারণা প্রথম প্রকাশ করেন চার্লস ব্যাবেজ । তিনি এটির নাম দেন ডিফারেন্স ইঞ্জিন (Difference Engine)। ১৮৩৩ সালে এই ডিফারেন্স ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করার সময় তিনি অ্যানালাইটিক্যাল ইঞ্জিন নামে আরও উন্নত ও সর্বজনীন একটি যন্ত্রের ধারণা দেন। ভাই চার্লস ব্যাবেজ কে কম্পিউটরের জনক বলা হয়। যদিও তিনি প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও অর্থের অভাবে কোনোটির কাজই শেষ করতে পারেননি।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের সত্যিকার সূচনা হয় অ্যালান টুরিং এর প্রথমে তাত্ত্বিক ও পরে ব্যবহারিক গবেষণার মাধ্যমে। বিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেল কর্পোরেশন ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবন করার পর থেকে বাজারে আসতে শুরু করে মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক কম্পিউটার। তখন থেকে কম্পিউটারের আকৃতি ও কার্যক্ষমতায় এক বিরাট বিপ্লব সাধিত হয়। ১৯৮১ সালে বাজারে আসে আই.বি.এস কোম্পানির পার্সোনাল কম্পিউটার (Personal Computer) বা পিসি (PC)। এর পর উদ্ভাবিত হতে থাকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোপ্রসেসর এবং তৈরি হতে থাকে শক্তিশালী পিসি । আই.বি.এম কোম্পানি প্রথম থেকেই আই.বি.এম কম্পোর্টেবল কম্পিউটার (IBM compatible computer) তৈরির ক্ষেত্রে কোনো বাধা-নিষেধ না রাখায় এ ধরনের কম্পিউটারগুলির মূল্য ব্যাপক হারে হ্রাস পায় এবং এর ব্যবহারও ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশে কম্পিউটার ব্যবহারের সুচনা হয় ষাটের দশকে। পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশনের পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, ঢাকা-তে ১৯৬৪ সালে স্থাপিত হয় বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম কম্পিউটার। এটি ছিল আই.বি.এম (International Business Machines IBM) কোম্পানির ১৯৬২ সিরিজের একটি মেইনফ্রেম (Mainframe Computer) কম্পিউটার । যন্ত্রটির প্রধান ব্যবহার ছিল জটিল পবেষণা কাজে গাণিতিক হিসাব সম্পন্নকরণ। নববই-এর দশকে কম্পিউটার এর ব্যবহার ব্যাপকতা লাভকরে। দর্শকের মধ্যভাগ থেকে এ দেশেতথ্য প্রযুক্তি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে।
কম্পিউটারের জনক: কম্পিউটার তৈরির প্রথম ধারণা দেন বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজ। ১৮৩৩ সালে সর্বপ্রথম এ্যানালটিক্যাল ইঞ্জিন (Analytical Engine) নামে একটি যান্ত্রিক Computer তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং ইঞ্জিনের নকশা তৈরী করেন। পরবর্তীকালে তাঁর তৈরি নকশা ও কম্পিউটারের ওপর ভিত্তি করেই আজকের আধুনিক কম্পিউটার তৈরি করা হয়। তার এই এ্যানালটিক্যাল ইঞ্জিনের পরিকল্পনায় আধুনিক কম্পিউটারের ধারণা ছিল বলেই চার্লস ব্যাবেজকে কম্পিউটারের জনক বলা হয়।
অন্যদিকে, জন ভন নিউম্যানকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়। তিনি একজন হাঙ্গোরীয় বংশোদ্ভুত মার্কিন গণিতবিদ। নিউম্যান কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় অপারেটর তত্ত্বব্যবহারের অগ্রদূত। তিনি সেটতত্ত্ব, জ্যামিতি, প্রবাহী গতিবিদ্যা, অর্থনীতি, যোগাশ্রয়ীপ্রোগ্রামিং, কম্পিউটার বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান সহ আরো অনেক ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটারের নাম হচ্ছে ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Com - puter)। এটিই প্রথম প্রোগ্রাম নিয়ে কাজকরার ডিজিটাল কম্পিউটার। এর পর থেকেই মূলত কম্পিউটার প্রজন্ম শুরু হয়।
Read more